১। ভৌগলিক অবস্থানঃ- সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলাধীন সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামলায় ভরপুর মোহনপুর ইউনিয়ন। ইহার পূর্বে দূর্গানগর ইউনিয়ন, পশ্চিমে ভাঙ্গুড়া উপজেলা, উত্তরে একই উপজেলার কয়ড়া ইউনিয়ন ও দক্ষিণে ফরিদপুর উপজেলা। ইহার আয়তন ৯০৪৯.০৬ একর এবং সীমা ১৪.১৪ বর্গমাইল।
২। জনসংখ্যাঃ- জনসংখ্যা প্রায় ৪৬,০০০ (ছয়চল্লিশ হাজার)। শিক্ষার হার- ৮০% । শতকরা ৯৫% মুসলমান, ৪% হিন্দু এবং ১% অন্যান্য ধর্মাবম্বী।
৩। শিক্ষা ও সংস্কৃতিঃ- অত্র ইউনিয়নে শিক্ষার হার শতকরা ৮০% ভাগ। এখানে ১টি মহাবিদ্যালয়, ৫টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০টি রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি কমিউনিটি বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এখানে ৩টি সংগীত বিদ্যালয় আছে। ঐ সকল সংগীত বিদ্যালয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ও কিশোর কিশোরীদেরকে গান-বাজনা শেখানো হয়। এ সমস্ত শিক্ষার্থীদের দ্বারা বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠানে গান-বাজনা পরিবেশন করা হয় ।
৪। যোগাযোগঃ- মোহনপুর ইউনিয়ন একটি নিম্নাঞ্চল এলাকা। সামান্য বর্ষাতেই সমস্ত এলাকা প্লাবিত হয়ে থাকে, যার ফলে অভ্যান্তরীন যোগাযোগ তেমন ভাল না। তবে বর্ষা মৌসুমে নৌকা যোগে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করা যায়। এখানে ২০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা এবং ৫০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা আছে। এখানে ঢাকা-রাজশাহী রেল যোগাযোগ আছে এবং সড়ক পথে ও ঢাকা-রাজশাহী সহ দে্শের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করা যায় ।
৫। কৃষিঃ- মোহনপুর ইউনিয়নের শতকরা ৮০% লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। এখানে প্রচুর পরিমানে ধান, গম, সরিষা, আলু এবং সবজীর চাষ-আবাদ করা হয়, যা অত্র এলাকার চাহিদা পূরণের পরও দেশের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানী করা যায়।
৬। নদ-নদী, পুকুর ও জলাশয়ঃ- মোহনপুর ইউনিয়নের মাঝামাঝি ২টি নদী প্রবাহিত হয়েছে। একটি গোহালা নদী ও অপরটি কোমলা বানিয়াধান নদী, ইহাছাড়া অনেক ব্যক্তিগত পুকুর ও খাস পুকুর আছে। এখানে প্রচুর পরিমানে মাছের চাষ করা হয়। এখানে যে পরিমান মাছ পাওয়া যায় তা অত্র ইউনিয়নের চাহিদা পুরণের পরও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়।
৭। গবাদী পশুঃ- মোহনপুর ইউনিয়নে দেশী-বিদাশী গবাদী পশু পালন করা হয়। যেমন- উন্নতজাতের গাভী, হাঁস-মুরগী, ছাগল-ভেড়া পালন করা হয়। উন্নত জাতের গাভীর ফার্ম থেকে প্রচুর দুগ্ধ উৎপাদন হয় । এই দুধ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানী করা হয় এবং এখানে গরু ও ছাগলের মাংস পাওয়া যায়।
৮। শিল্প কারখানাঃ- মোহনপুর ইউনিয়নে বাংলাদেশ মিল্কভিটা নামে দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রসহ ব্র্যাক দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র, প্রাণ দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র আছে। এখানে এসকল কারখানায় প্রচুর পরিমানে দুগ্ধ শীতল করে দেশের বিভিন্ন মিল্কভিটায় সরবরাহ করা হয়। ইহাতে প্রচুর পরিমানে অর্থ উপার্জিত হয়। বর্তমানে দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রে পাশে একটি গোখাদ্য কারখানা স্থাপন করা হয়েছে।
৯। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাঃ- মোহনপুর ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার মাঠকর্মীগণ সার্বক্ষনিক স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত আছে। ইহাছাড়া বিভিন্ন বে-সরকারী সংস্থা স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত। অত্র ইউনিয়নে একটি হাসপাতাল ও ওয়ার্ড ভিত্তিক ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। যাহাদ্বারা বিভিন্ন বয়সী মেয়েদেরসহ সকল শ্রেণীর মানুষকে চিকিৎসা করা হয়।
১০।বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান/ব্যবসাঃ- মোহনপুর ইউনিয়নে সোনালী ব্যাংক, গ্রামীন ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও আশা ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে, যাহা সার্বক্ষণিক জনগণের সেবায় নিয়োজিত আছে। ইহাছাড়া বিভিন্ন সমিতি আছে, যাহা বাংলাদেশ সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত।
১১। প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গঃ- মোহনপুর ইউনিয়নে অনেক সুনামধন্য লোকের জন্ম। বিশেষ করে লাহিড়ী পরিবারে জন্ম “অমূল্য লাহিড়ী” নামে একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ছিল। তার নামানুসারে লাহিড়ী মোহনপুর রেলস্টেশন নামে পরিচিতি লাভ করে। ইহাছাড়া ক্ষিতিমোহন লাহিড়ী, মির্জা মেনহাজ উদ্দিন, মিজানুর রহমান খন্দকার, অধ্যক্ষ আবুল হোসেন এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক সংসদ সদস্য- উত্তর বঙ্গের লালসূর্য পলাশ ডাঙ্গার সর্বাধিনায়ক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আলহাজ আব্দুল লতিফ মির্জাসহ আরও অনেক রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সেবক ব্যক্তিদের জন্ম হয়েছিল। যাহারা দেশ ও জাতীর জন্য গর্ব।
তথ্য প্রদানেঃ=
মোঃ আব্দুল মান্নান
উদ্যোক্তা ও পরিচালক
মোহনপুর ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র
উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ।
ছবি