Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভাষা ও সংস্কৃতি

[বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে এদেশে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল । সেই ভাষা আন্দোলনে শহীদ হয়- সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত আরও অনেকে । তাহারা বাংলাভাষাকে টিকিয়ে রেখে গেছেন এদেশের মানুষকে বাংলা ভাষায় কথা বলার সুবিধার্থে । আমরা বাংলাদেশে জম্মেছি তাই মাতৃভাষা বাংলাতে কথা বলি, তারই ধারাবাহিকতায় মোহনপুর ইউনিয়নের সকল পেশাজীবি শ্রেণীর লোকজন মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলে। বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষার লোকজন এই ইউনিয়নে নাই। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজী এবং আরবী ভাষা শিখানো হয়। এই ইউনিয়নের লোকজন সংস্কৃতিমনা যদিও এখানে জাতীয় কোন শিল্পী নাই । এই ইউনিয়নে ২টি সংগীত বিদ্যালয় আছে । সেখানে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের গান শেখানো হয়। ইহাছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন- জাতীয় দিবস, বৈশাখী মেলা, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ভাষা ও শহীদ দিবস । এই সব দিবসে দেশের গান, জারী গান, বাউল গান, নজরুল গীতি, রবিন্দ্র সংগীত, ভাটিয়ালী, ইসলামিক গান সহ বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় ও বহিরাগত শিল্পীদের সম্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাবিত করে থাকে্ । বর্ষা মৌসুমে নৌকা প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে।

বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা- প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন ক্রীড়া মূলক প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে থাকে। প্রতিবছর ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে।সকল বয়সী লোকদের মাঝে ক্রিকেট, ফুটবল, হাডুডু, ভলিবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নিয়ে থাকে।       

এছাড়া ইসলাম ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন- ঈদ এ মিলাদুন্নবী, ফাতেহা ইয়াজদাহাম, ফাতেহা দোয়াজদাহাম, মহারম, ঈদুল ফেতর ও ঈদুল আজহা পালিত হয়। এবং হিন্দু সম্প্রাদয় তারা তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো নিয়মিত পালন করে থাকে ।]

 

ভাষাসংস্কৃতি-

মোহনপুর ইউনিয়নের সবাই বাঙ্গালী, তাই তাদের একই ভাষা-বাংলা । ভাষা ও সাংস্কুতিতে আমাদের মোহনপুর ইউনিয়ন একটি প্রশিদ্ধ ইউনিয়ন । এখানে ১৯৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এখানে ভাষার  জন্য প্রতিরোধ গড়ে ওঠে । সেই বাংলাভাষার উচ্চারণের মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য দেখা যায় । গ্রামবাসী ও শহরবাসীর উচ্চারণের মধ্যে সাধারণতঃ পার্থক্য পাওয়া যায় । তার কারণ শহরের মানুষ অধিকাংশই শিক্ষিত, তাই তারা শুদ্ধ ভাবে লিখতে, পড়তে এবং বলতে পারে, যা’ অধিকাংশ অশিক্ষিত গ্রাম্য মানুষের ক্ষেত্রে সম্ভব নয় । প্রসঙ্গক্রমে গ্রামীণ ভাষার কিছু নমুনা নিম্নে উদ্ধৃত করা হ’ল।

গ্রাম্য উচ্চারণ

শুদ্ধ কথা

গ্রাম্য উচ্চারণ

শুদ্ধ কথা

আঁঠ্যা

উচ্ছিষ্ট

ছ্যাপ

থুথু

উর‌্যাৎ

উরুদেশ

ডাঙ্গর

বড়

কচলান

মাজা

কেডা

কে

কনে

কোথায়

প্যাঁক

কাদা

কুত্যা

কুকুর

গতর

শরীর

শিশুর নাম করণ-

হিন্দু এবং মুসলমান সকলেই পুত্র-কন্যার দুইটি করে নাম রাখে; একটি চলিত বা ডাক নাম, অপরটি; ভাল নাম । হিন্দুদের মধ্যে রাধাবল্লভ, পার্বতীশঙ্কর, কালিদাস প্রভৃতি এবং মুসলমানদের মধ্যে মোহম্মদ, ইয়াকুব, রহিম, করিম প্রভৃতি নাম প্রচলিত ছিল । বর্তমানে শিশুদের নাম করণে আমুল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে । অভিভাবকগণ শিশুর নাম করণে পাশ্চাত্য ধারাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন

 

শোক প্রকাশ-

সাধারণ লোক উচ্চস্বরে ক্রন্দন করে শোক প্রকাশ করে ।ভদ্র বংশীয় হিন্দু মুসলমান স্ত্রী-পুরুষ সকলেই আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুতে ধীরে নীরবে শোক প্রকাশ করে । সাধারণ শ্রেণীর লোক উচ্চরবে মৃতব্যাক্তির গুণাবলী  কীর্তন করত যে ক্রন্দন করে তা দূর হতে গীত ধ্বনি বলে প্রতীয়মান হয়

 

আচার অনুষ্ঠান-

পূর্বে হিন্দু সমাজে কন্যা পণ দিতে হত । এখন ও নিম্নশ্রেণীর মধ্যে এই প্রথা বর্তমান আছে । কিন্তু ভদ্র সমাজে পাত্রপণ ক্রমশই অধিক প্রচলিত হচ্ছে । ভদ্র সমাজে বরযাত্রীগণের আবদার ও উৎপাতে এবং চা, বিস্কুট, সোডা, লেমোনেড সরবরাহ করতে কন্যা কর্তার প্রাণ ওষ্ঠাগত হয় । নিম্নশ্রেণীর মধ্যে এধরণের অত্যাচার বিশেষ পরিলক্ষিত হয়না । মুসলমান সমাজে ও আতশবাজি ব্যবহার ও প্রীতি উপহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

কুসংস্কার-

মোহনপুর ইউনিয়নের লোকের মধ্যে নানারূপ সংস্কার পরিলক্ষিত হয় । যেমন ভূতে পাওয়া বা ধরা, ব্রহ্মদৈত্য আনা ইত্যাদি । কারো কারো মধ্যে বার আসা, অন্যের উন্নতি বা ব্যাধি পীড়ায় ঈর্ষামূলে চোখ দেওয়া, রাত্রিতে দোকানদার গণের কোনও কোনও দ্রব্য যথা হলুদ, মধু, হরিতকি বিক্রয় না করার সংস্কার পরিলক্ষিত হয়।

 

পার্বন-

মুসলমানের ধর্মীয় উৎসব ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী, ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আজহা, মোহররম, শব-ই-বরাত, ফাতেহা-ই-ইয়াজ-দাহম, আখেরী চাহার শোম্বা প্রভৃতি । হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা, কালীপূজা, লক্ষ্মীপূজা, সরস্বতীপূজা, জন্মষ্টমী প্রভৃতি । খৃষ্টানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্মদিন, গুড ফ্রাইডে ইত্যাদি । দোলযাত্রা, ঝুলনযাত্রা, রাসযাত্রা, পু্ষ্পদোল, লক্ষ্মীপুজা, কার্তিকপুজা, বাসন্তীপুজা প্রভৃতি উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ জেলার স্থানে স্থানে বিশেষ আমোদ উৎসব হয়ে থাকে। নষ্টচন্দ্রা ও হরিতালিকা দিনে বালকেরা যেকৌতুক ও আমোদ উপভোগ করে তা অনেক সময় লোকের অনিষ্টকারক হয়ে থাকে।

 

ব্রত পূজা-

মোহনপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, নবশাক এবং সাহা সম্প্রদায়ের মধ্যে অমাবস্যা ব্রত, যমপুকুর, পুণ্যপুকুর, অশোকষষ্ঠী, জামাইষষ্ঠী, চাপড়ষষ্ঠী, সাবিত্রী, রামনবমী, সম্পদনারায়ণ, জন্মাষ্টমী, মঙ্গলচন্ডী, শুভচন্ডী, কুলাইচন্ডী, সত্যনারায়ণ প্রভৃতি ব্রতপুজাদি সর্বত্র বিদ্যমান আছে । কার্তিক মাসে আকাশ প্রদীপ দেয়া এবং পৌষ মাসের সংক্রান্তির দিনে গাভী ছেড়ে দেয়ার ও তাড়ানোর প্রথা বর্তমান আছে ।

 

আবাস-

সাধারণত পল্লীবাসী উলুখড় নির্মিত ‘বাঙ্গালা’ ‘চৌরী’ কাঁচা গৃহে বাস করে ।কেনেস্তারা ও করগেট টিনের গৃহ ৩৫/৪০ বৎসর ধরে প্রচলিত আছে । ধণীলোক দালানে বাস করে । অতিপূর্বে এদেশের মাটির কোঠা প্রচলিত ছিল । অধুনা ডেমরা কোঠার নিদর্শন আছে । কপাট-জানালার ব্যবহার সর্বত্রই আছে্ । গরিব লোক কপটের পরিবর্তে চাটাই নির্মিত বেড়া বা ঝাঁপ ব্যবহার করে । তবে যেসব গ্রামেবাজারবাহাটআছে, ব্যবসায়ীআছে, সেসবগ্রামেকিছুকিছুপাকাদালানআছে।কাঁচাবাসারসংখ্যানগণ্য-প্রায় সবাই পাকা দালানে বসবাস করে । কিছু ছোট ছোট রাস্তা আছে যা পাকা তবে কংক্রীট বা পিচ ঢালা নয়।

 

খাদ্য-

মোহনপুর ইউনিয়নের মানুষের প্রধান খাদ্য- ভাত, রুটি, ডাল, শাক-সবজি, মুড়ি, চিড়া ইত্যাদি । গ্রামে পান্তা ও কড়কড়া ভাতের বহুল প্রচালন আছে । এমনকি অবস্থা সম্পন্ন ঘরে ও সকালে বাসী তরকারীর সঙ্গে পান্তা খাওয়া হয় । খাদ্যের প্রশ্নে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য নাই, একমাত্র গরুর গোশত ব্যতীত, যা হিন্দুরা খায়না । তবে যে হিন্দুরা এক কালে পেয়াজ, রসুন, মুরগী, ডিম, গরু প্রভৃতির নাম শুনলে নাক সিটকে দুরে সরে যেত, বর্তমান কালে তারা সেসব খাদ্যের বড় সমঝদার হয়ে পড়েছে । গ্রামের সঙ্গতি সম্পন্ন পরিবারে নানা ধরণের পিঠা যেমন- সরাপিঠা, পাটীসাপ্টা, ছিটাপিঠা, রুটিপিঠা, পরটা, তেলপিঠা, কুস্লীপিঠা, তালপিঠা, তালবড়া, সেমাই, পায়েস, হালুয়া, দুধেরক্ষীর, ভাপাপিঠা (ধুকীপিঠা) প্রভৃতি প্রস্তত  হয়ে থাকে । বিশেষ করে জামাই আসলে বা কোন মেহমান আসলে সেসব খাবার অবশ্যই বাড়ীতে হ‘তে হবে এবং তা’হয় প্রধানতঃ পরিবারের ইজ্জত বা Prestige এর প্রশ্নে । এ মনকি বহু পরিবারে সঙ্গতি না থাকলে ও দেনা করে, ঐসব খাবার তৈরি ক‘রে মেহমান নওয়াজী দেখাতে হয় । তাই তাকে কৃষ্টির অঙ্গ বলে ধরা হয়।

 

পরিচ্ছদ-

মোহনপুর ইউনিয়নের নির্দিষ্ট বা বিশেষ কোন পোষাক কোন দিনই ছিলনা, আজও নেই । তবে হিন্দু মুসলমানের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নে কিছুটা পার্থক্য আছে । হিন্দুরা ভাবে ধুতিই তার জাতীয় পোষাক আর তার সাথে ফতুয়া ও চাদর । পায়জামা, পাঞ্জাবী, সেরওয়ানী, লুঙ্গী, টুপি, জুতা প্রভৃতি সাধারণতঃ মুসলমানের নির্দিষ্ট পোষাক বলে প্রচলিত আছে । ইদানিং হাফ-হাতা হাওয়াই-সার্ট, ফতুয়া, খাটো পাঞ্জাবী ইত্যাদির রেওয়াজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে । পায়ে জুতা অথবা স্যান্ডেল থাকে । হিন্দুরা ধুতি ও সার্ট বা পাঞ্জাবী পরে । শিরস্রাণের ব্যবহার সচরাচর নাই । উভয় সম্প্রদায়ের মেয়েরা শাড়ী, ব্লাউজ, সেমিজ, জামা, পায়জামা, ওড়না, স্কার্ট, ম্যাক্সি ইত্যাদি পড়ে । ইদানিং কিশোরী মেয়েদের মধ্যে বোরকার পাশাপাশি ফতুয়া-জিন্স এর ব্যবহার ও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

 

খেলাধুলা-

লাঠি খেলা মোহনপুর ইউনিয়নের একটি প্রসিদ্ধ খেলা । মোহনপুর ইউনিয়নের  লাঠিয়ালগণের বিশেষ সুনাম আছে । গারসি ও মহরম সময়ে সর্বত্রই লাঠি খেলার প্রচলন আছে । ৩০আশ্বিন মোহনপুর ইউনিয়নের ‘গারসি’ বলে পরিচিত । এইদিনে সাধারণ হিন্দু মুসলমানগণের অনেকেই কুস্তি ও মল্ল ক্রীড়াদি প্রদর্শন করে থাকে । পলো নিয়ে মাছ মারা এই মোহনপুর  ইউনিয়নের  লোকের একটি প্রাচীন আমোদ । মহিষের সিঙা বাজিয়ে লাঠি ও পলো কাঁধে নিয়ে শতাধিক লোক একত্রিত হয়ে বিল জলাশয়ে মাছ ধরে । এরা ‘‘বাহুত’’ নামে পরিচিত।

নৌকা চালনে মোহনপুর ইউনিয়নের লোক বিশেষ অভ্যস্ত । দুর্গোৎসবে দহকুলা গ্রামের নৌকা বাইচ প্রথা ও পানসি নৌকার সাজ এবং সারি গানের আমোদ বহুদিন হতে প্রচলিত । এদেশের বালকদের মধ্যে শীতকালে ঘুড়ি বা ঘুন্নি উড়ানোর প্রথা প্রচলিত আছে । এটি একটি প্রধান ক্রীড়া বা আমোদ বলে গণ্য । হাডুডু বা হৈলডুবি অনেক অঞ্চলে প্রচলিত । ডান্ডাগুলি, কঢ়িখেলা, লাটিম কাচ্চা প্রভৃতি বালকদের মধ্যে, তাস আবাল বৃদ্ধ বণিতা এবং পাশা, দাবা যুবক ও বৃদ্ধগণের মধ্যে দেখা যায় । কোথাও কোথাও তুরমি খেলা প্রচলিত আছে । সাতবিলা গ্রামে পৌষ পার্বণে চিঠি খেলার বিশেষ প্রচলন আছে ।বর্তমানে স্কুল ও কলেজে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, টেনিস ইত্যাদি খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

 

আঞ্চলিক গান-

মোহনপুর ইউনিয়নের গানে সমৃদ্ধ । এখানের মাঠে ঘাটে গ্রামান্তরে অজস্ত্র লোক সংগীত শ্রুত হয় । এগুলোর মধ্যে বর্ষার গান উল্লেখ যোগ্য । যে গানে ভালবাসায় সিক্ত গ্রামের একজন বধুর অনুভুতি বর্ণনা করা হয়েছে।

 

{মোহনপুর ইউনিয়নের আরো যে সমস্ত গান প্রচলিত আছে সেগুলোর মধ্যে ঘুমপারানী গান, বিয়েরগান, ঘুম ভাঙ্গানো গান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য}।